Tuesday, March 12, 2019

পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলার সত্য মিথ্যা


সুমন দত্ত
সন্ত্রাস কবলিত পাকিস্তানে ন্যাটোর ড্রোন হামলা ছিল সাধারণ বিষয়। এবার প্রতিবেশী ভারত সেখানে বিমান হামলা চালালো। আর এতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল গোটা উপমহাদেশ। মিডিয়ায় শুরু হলো এ নিয়ে নানা বিচার বিশ্লেষণ। আর এ বিতর্কে গলা মেলালো বাম,ডান, মধ্য, উদার সব মতের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, সমর ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। থাপ্পড় খেয়ে পাল্টা থাপ্পড় না দেয়ায় অনেকে পাকিস্তানের ইমরানকে নোবেল দিতে চাইলো।

 অন্যদিকে জঙ্গি ডেরায় হামলা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তার ভক্তকুলে বিশাল জনপ্রিয়তা পান। মোদীকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে চাইছেন তার ভক্তকূল। 

বোলাকতে ভারতের বিমান হামলা নিয়ে আছে বিতর্ক। পাকিস্তানের মিডিয়া বলছে হামলায় কিছু পাইন গাছ উপরে গেছে। প্রাণীকুলে মারা গেছে একটি কাক। 

বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে একমাত্র রয়টার্স বলেছে হামলায় ১ জন আহত হয়েছে। ভারতের দাবি নিহত ৩০০ থেকে ৩৫০। পরে এই সংখ্যাটা কমে। সেটি বিজেপির সেক্রেটারি অমিত শাহের মতে ২৫০। পরে ভারতের  WION নামে একটি ইংরেজি চ্যানেল ইতালিয়ান সাংবাদিকের সূত্রমতে এই সংখ্যাটা ৩৫ নামিয়ে আনে।

 প্রকৃতপক্ষে হামলার খবরটা পাকিস্তানই তার দেশে প্রচার করে সবার আগে। ভারত তার জবাবে হামলার কথা স্বীকার করে। পাকিস্তান অতীতেও ভারতের সঙ্গে কার্গিল যুদ্ধে তাদের সেনা নিহতের কথাগুলো চেপে গিয়েছিল।

 সে সময় কার্গিলে পাহারের চূড়ায় জঙ্গিদের সঙ্গে ছিল পাকিস্তানের সেনা। ভারতের মিরাজ জঙ্গি বিমান থেকে সেই পাহারের চূড়ায় বোমা ফেলা হয়। এতে জঙ্গিদের সঙ্গে নিহত হয় পাকিস্তানের সেনা। তখন ক্ষমতায় ছিল অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার। পাকিস্তানে নওয়াজ শরীফ সরকার এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে সামরিক অভুত্থানের কবলে পড়েন। ক্ষমতায় আসেন পারভেজ মুশাররফ। 

 পরে ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্যরা  পাহারের চূড়ায় উঠে। সেখানে অসংখ্য  মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। কয়েকজনের পরিচয় প্রকাশ করে তারা। 

তার আগ পর্যন্ত বিশ্ব মিডিয়া এসব সেনা হতাহতের খবর প্রকাশ করেনি। সুতরাং আজকের বালাকোটে যারা মারা গিয়েছে তাদের খবরও বিশ্ব মিডিয়া জানতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক।  

ভারত সরকার নিজে থেকে প্রকাশ করলে তা জানা যাবে। কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের যখন পদক দেয়া হয় তখন কোন যুদ্ধে এরা মারা গিয়েছিল তা এড়িয়ে যাওয়া হয়। সেদিন এটা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর হয়। তাই আজকের দিনে জইশ জঙ্গিদের সঙ্গে যেসব পাক সেনাসদস্য মারা যাবে আগামীতে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেই হয়ত তাদের মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। সেদিন হয়ত ভারতীয় বিমান হামলার খবর এড়িয়ে যাওয়া হবে।


ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদী এই হামলা করিয়েছে। এ ধরনের একটি ব্যাখ্যা ও যুক্তি অনেকেই দিচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাবার পর যখন ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি তখন ইরাকে ও আফগানিস্তানে  মিসাইল হামলা চালানো হয়।  তখন অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছিল জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে ক্লিনটন এ কাজ করেছে। তাই আজ ভোট টানতে মোদী এই হামলা করেছে এটা যারা বলছেন তারা ওই টাইপের বিশ্লেষক। 
     
ভারতের কংগ্রেসসহ বিজেপি বিরোধীরা সরকারের কাছে বালাকোট বিমান হামলার সাক্ষ্য প্রমাণ চাইছে । আর এই প্রমাণ চাওয়াতেই বিজেপির দেশ প্রেমের ইমানি অঙ্গে লেগেছে আগুন। তারা হামলার প্রমাণ মিডিয়ায় প্রকাশ করতে পারছে না। উল্টো যারা প্রমাণ চাইছে তাদেরকে পাকিস্তানের এজেন্ট ও দেশদ্রোহী আখ্যা দিচ্ছে। 

আজ ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট অভিনন্দনকে নিয়ে হিরোয়িক কাহিনি তৈরি হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে বলিউডে তাকে নিয়ে ছবি তৈরি হবে। অথচ ভারতের কোনো মিডিয়া প্রশ্ন করছে না, এই অভিনন্দন কেন এত দ্রুত পাকিস্তানের সীমানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল। তাও আবার পুরানো মিগ-২১ নিয়ে। 

ভারতের মিগ-২১ নিয়ে নানা মুখরোচক কাহিনী আছে। যা সত্যি। একটা সময় ভারতের মিগ-২১ বিমান যুদ্ধ ছাড়াই যখন তখন আকাশ থেকে পড়ে যেত। এ নিয়ে সনি টিভিতে শেখর সুমন বেশ কয়েকটা কমেডি সিরিজ করে দর্শক হাসিয়েছেন। 

প্রশিক্ষণ চলা কালে মিগ-২১ মানুষের ঘর বাড়িতে পড়া শুরু করল। শেখর সুমন তার অনুষ্ঠানে দেখান মিগের পাইলটরা মানুষের স্নানঘরে চালা ভেঙ্গে পড়েছে। আর কাপড় বিহীন পাবলিক গোসল ঘরে মিগের পাইলটকে হা করে দেখছে। তারপর পাইলটরা জবাব দিচ্ছে ভাই কাল না আমি তোমার ঘরে পড়েছিলাম। তখন তোমার বউ এই গোসল ঘরে ছিল। আজ তোমাকে পেলাম। এই হল ভারতের মিগ-২১।

জঙ্গি দমনে আমেরিকা ফ্রান্স যখন অত্যাধুনিক বিমান নিয়ে মিশনে যাচ্ছে সেখানে ভারতের বিমান বাহিনী ব্যবহার করছে ৮০ দশকের মিগ-২১। যেখানে ভারতের বিমান বাহিনীর কাছে আছে অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমান আছে। 

তারপর জানা গেল পাকিস্তানের ড্রোন ধ্বংস করতে ভারত অত্যাধুনিক সুখয় বিমান ব্যবহার করছে। এ যেন মশা মারতে কামান দাগানো। সুখয় বিমানে যে ক্ষেপণাস্ত্র লাগানো থাকে তার দাম ওই পাকি ড্রোন থেকে বেশি। তাই পাকিস্তানি চীনা প্রযুক্তির খেলনা ড্রোনকে সুখয় দিয়ে ধ্বংস করে ভারত তার শক্তির অপচয় করছে। 

 তার চেয়ে ভালো হয়, যেখান থেকে এসব ড্রোন উড়ানো হচ্ছে সেখানে গিয়ে কয়টা বোমা ফেলা। যাতে আর ড্রোন উড়তে না পারে। কয়েক বছর আগে আফগানিস্তানে অবস্থানরত ন্যাটো বাহিনী এই কৌশল প্রয়োগ করেছিল। পাকিস্তানের যেখান থেকে ন্যাটো সেনাদের ওপর বোমা হামলা হতো সেখান গাইডেড বোমা ফেলে ন্যাটো। দেখাগেল পুরো পাক ব্যাটালিয়ন শেষ।  

 ভারত কোনো আগ্রাসী শক্তি নয়। ভারতের হাজার বছর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই ভূমি থেকে কোন আক্রমণ রচিত হয়নি। উল্টো এই ভূমিতে অনেকে আক্রমণ করতে এসেছে। ১৯৪৫ সালে ভারত স্বাধীন হবার পর মাত্র দুটি দেশে শান্তি রক্ষায় সামরিক অভিযান চালায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। এরপর শ্রীলঙ্কায় তামিল বিদ্রোহ দমনে সেনা মোতায়েন। এছাড়া ভারত জাতিসংঘ শান্তি মিশন ছাড়া অন্য কোনো স্থানে সামরিক অভিযান চালায়নি। 

ভারত বহুবার সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে। প্রতিবেশী পাকিস্তান থেকে এসব সন্ত্রাস চালানো হয়। কোনো বারই ভারত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। তাই ভারতকে কাপুরুষ ভীতুর ডিম বলা হতো। বিশাল বড় সামরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও ভারত কেন বসে বসে সন্ত্রাসীদের মার খাচ্ছে এই জবাব বিজেপি সরকারের আগে যেসব সরকার এসেছে তাদের কাছে পাওয়া যেত না।  জোট সরকারের কুফলই ছিল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা। 

বহুদিন বাদে ভারতে একক শক্তির সরকার আসে। সেটি বিজেপি সরকার। আর  তাতে পরিবর্তন হয় কৌশলের।  সন্ত্রাস দমনে বর্তমান বিজেপি সরকার যে নীতি নিয়েছে সেটা আগের কোনো সরকারের মধ্যে দেখা যায়নি। এটা এক অন্য ভারতকে দেখছে বিশ্ব।

 প্রথমেই উত্তর পূর্ব বিদ্রোহীদের দমন করতে মিয়ানমারের ভিতরে গিয়ে হামলা চালায় ভারতের সামরিক বাহিনী। আর এতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় পাকিস্তান ও চীনের। ভারতের জাতীয়তাবাদী শক্তির আচরণ যে এমন ভয়ানক প্রকৃতির হবে সেটা সেদিনই বুঝে গিয়েছিল পাকিস্তান ও চীন। 

তাই উরিতে যেদিন সন্ত্রাসী হামলা হলো তার পরই নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানের ভিতর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালালো। এরপর চীন ডোকলামে অবকাঠামো গড়ার চেষ্টা করলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এটা পুরো বিশ্ব দেখেছে। ডোকলাম নিয়ে ভারত ও চীন মুখোমুখি অবস্থায় এসে পড়ে। দীর্ঘ ২ মাস চীন ডোকলাম নিয়ে ভারতকে ডর ভয় দেখাতে থাকে। তিব্বতে চালায় বড় বড় সামরিক মহড়া। 

ভারত চীনের এসব নর্তন কুর্দন দেখে ঘাবড়ে না গিয়ে সেখানে ঠায় দাড়িয়ে থাকে। অবশেষে দুই দেশ কূটনৈতিকভাবে বিষয়টির সুরাহা করে। সেদিন কোনো শক্তি চীনের পক্ষ নেয়নি। সুতরাং চীন যেখানে সীমান্ত ঝামেলায় আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন পায় না। সেখানে পাকিস্তান পাবে বালাকোট নিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন।   

ডোকলাম সমস্যায় ভারতের পক্ষে ছিল রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার একাধিক সামরিক ও নিরাপত্তা চুক্তি আছে। দুটো দেশই ভারতকে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখে। এমনকি জাতিসংঘের স্থায়ী নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ পেতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ই ভারতকে সমর্থন করে। এর পেছনে দুই দেশেরই সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। দু দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর থাকার কারণেই সব বিষয়ে ভারত এই দেশ দুটির কাছে এক ধরনের অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সফলতা এখানেই।

 অন্যদিকে পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের আশ্রয় পশ্রয় দেয়ার কারণে বিশ্ববাসী থেকে আলাদা হয়ে গেছে। তাই ভারত যখন বলে সে সন্ত্রাসীদের ডেরায় হামলা চালিয়েছে তখন পাকিস্তান এই হামলার বিপক্ষে কোনো দেশের সমর্থন পায় না। তাছাড়া পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া রাষ্ট্র। নতুন ইমরান সরকার বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। আর পাকিস্তানের জন্য অর্থ সাহায্য চাইছেন।

ইমরান খান দেশের মানুষের চাহিদা পুরনে  দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। এতদিন তিনি নওয়াজ শরীফ ও বেনজির ভূট্টোর সরকারের সমালোচনা করেছেন। এখন ক্ষমতায় গিয়ে তিনি হারে হারে টের পাচ্ছেন দেশ চালানো কি কঠিন। ক্ষমতার ক্রান্তিকালীন সময় পার করছেন তিনি। পাকিস্তানকে সঠিক পথে আনতে গেলে তাকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

পাকিস্তানের মাটিতে বসে ভারত কিংবা আফগানিস্তানে সন্ত্রাস চালানো যাবে না। এর বাস্তবায়ন ইমরান খানকে করতে হবে। তা না হলে কোনো দেশ পাকিস্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে না। এমন অবস্থায় ভারতের মোদী সরকারের রণ হুঙ্কার তার কাছে মরার উপার খাড়ার ঘায়ের মতো। অভিনন্দনকে দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তার এই অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। অথচ গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে ভারতের নাগরিক কূলভুষণ যাদব এখনো পাকিস্তানের কারাগারে।      

পাকিস্তান আগামীতে টিকবে কিনা এ নিয়ে রয়েছে নানা মত। দেশটির বিদ্রোহী বেলুচ নেতারা দিল্লিতে অবস্থান করছে। সিন্ধুর নেতারাও দিল্লিতে আছেন। এদের নিয়ে ভারতের থিংক ট্যাংকরা নানা কাজ করছে। হয়ত একদিন সিন্ধু ও বেলুচিস্তান পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা পাবে। তখন হয়ত ভারত এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মত একটি সম্পর্ক গড়ে তুলবে। আজ বাংলাদেশ যেমন নিজের পায়ে দাঁড়ানো একটি জাতি। তখন হয়ত সিন্ধু ও বেলুচরাও নিজের পায়ে দাঁড়ানো জাতিতে পরিণত হবে।  

লেখক সাংবাদিক

1 comment:

  1. Why You Can't Use The Casino Roulette Game Without
    The gambling world is turning towards a roulette table. This is a new type 고양 출장샵 of casino experience 부산광역 출장안마 that can be played at a  시흥 출장안마 Rating: 4.2 공주 출장샵 · 익산 출장샵 ‎11 reviews

    ReplyDelete