মাদকবিরোধী অভিযানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রশ্নবিদ্ধ
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানকে দেশবাসী স্বাগত জানিয়েছে। তবে অভিযান নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছে অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। হচ্ছে বিতর্ক। আর এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তৃতা ও বিবৃতিতে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশে মাদকের বিস্তার ঘটেছে মহামারির মত। সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত রয়েছে মাদক সেবী। মাদকের এই বিস্তার একদিনে হয়নি। রাষ্ট্রের বহুদিনের উদাসীনতার ফল হচ্ছে আজকের এই পরিস্থিতি। নির্বাচনের এই বছরে হঠাৎ মাদক বিরোধী অভিযান অবাক করার মতোই। এ নিয়ে আছে অনেক ব্যাখ্যা।
বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, সরকার বিরোধীদের ভয় দেখাতে এই অভিযান শুরু করেছে। বিরোধী দলকে দমন করতে এই অভিযান শুরু করেছে। অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কাউকে কাউকে ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতা রিজভী, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের বক্তব্য ঘুরে ফিরে এরকমই। পাশাপাশি তাদের পাল্টা প্রশ্ন ছিল সরকারের দলে যে সব মাদক ব্যবসায়ী আছে তাদেরকে কেন ধরা হচ্ছে না।
এতদিন বিএনপি নেতারা বলে আসছিল তাদের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করে রেখেছে আওয়ামী লীগ। তাদেরকে গুম করে মেরে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। তাহলে প্রশ্ন যারা এখন মারা যাচ্ছে তারা কারা? আগের কথা সত্য হলে এখনকার কথা মিথ্যা হয়ে যায়। আর এখনকার কথা সত্য হলে আগের কথা মিথ্যা হয়ে যায়।
তাহলে কি ধরে নেব এখন সেই সব বিএনপি নেতা মারা যাচ্ছে যারা মাদকের ব্যবসা করে বিএনপির রাজনীতি টিকিয়ে রাখত। সেই তাদের পয়সায় বিএনপি সভা সমাবেশ করত।
আগামীতে বিএনপি এসব মাদক ব্যবসায়ীকে পাবে না দেখে কি তাদের মধ্যে এমন হতাশা তৈরি হয়েছে। যার প্রতিক্রিয়া দলটির শীর্ষ নেতাদের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে।
এদিকে মাদক বিরোধী অভিযান নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা মন্ত্রীদের কথাতেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে সরকারি দলের কিছু এমপি এই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে গেলে ও তাদের নাম পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশ হলে।
ইয়াবা বদি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই সাফাই দিয়ে বলেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে কিন্তু প্রমাণ নাই। তিনি সাংবাদিকদের প্রমাণ এনে দিতে বলেন। একজন স্বনামধন্য মাদক ব্যবসায়ীর এভাবেই পক্ষ নেন তিনি। এতে দেশবাসী হতাশ হয়েছে। তাছাড়া যেসব পুলিশ মাদক ব্যবসার সঙ্গে নানা ভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অনেকে সরকারের এমন দ্বিচারিতা দেখে মাদকবিরোধী অভিযানকে সাক্ষী নিধন অভিযান হিসেবে দেখছে।
এদিকে সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলেও রাজধানী ঢাকায় তেমন কিছু পরিলক্ষিত হচ্ছে না। হয়ত আগামী দিনগুলিতে হতে পারে।
মাদকের বিরুদ্ধে এই অভিযান সেদিনই সফল হবে যেদিন দলমত নির্বিশেষে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হবে। ইয়াবা বদি পুরান তালিকার মাদক সম্রাট। নতুন তালিকার মাদক সম্রাটদের ধরতে হবে। তবেই আসবে অভিযানে সফলতা। বেঁচে যাবে নতুন প্রজন্ম।
এই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে আছে সমাজের ও সরকারের আশপাশের লোকজন। এদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি। সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন এখানে জড়িত। তাই কাল বিলম্ব না করে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে হবে। চুনোপুঁটি ধরে মেরে এই সমস্যার সমাধান হবে না।মাদক ব্যবসায়ীদের গোঁড়া থেকে উপরে ফেলতে হবে।
No comments