ভারতে এনআরসি প্রকাশের নেপথ্যে ভোটব্যাংকের রাজনীতি
ভারতের আসাম রাজ্যে এনআরসি প্রকাশ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এনআরসি'র মানে হলো ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন অব সিটিজেন। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে আসাম রাজ্যে এনআরসি প্রকাশ হয়। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে যারা আসামে ছিল তাদেরকে আসামের বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে আর বাকীদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ৪০ লাখ লোক আসামে বিদেশি বলে চিহ্নিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালে আসামের ছাত্র সংগঠন অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি আন্দোলন শুরু করে। আসামে কারা বিদেশি, আর কারা আসামের এ নিয়ে রাজ্যে সরকারের সঙ্গে তাদের বিবাদ চলছিল। ছাত্ররা বিদেশিদের আসাম ছাড়ার দাবি জানায়। সেই আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালালে বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহত হয়। এরপর এই আন্দোলন আরো বেগবান হয়। এক সময় আন্দোলন আদালতে চলে যায়। আদালতে সিদ্ধান্ত হয় আসামে জন গণনা হবে। এতে চিহ্নিত করা হবে কারা বিদেশি ও কারা আসামের। তখন ছিল রাজীব গান্ধি সরকার। তারা আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করে। এরপর এই কাজ ধীরে ধীরে চলতে থাকে।
আসামে দীর্ঘদিন ছিল কংগ্রেস সরকার। তারা আদালতের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। কারণ এর পিছনে ছিল ভোট ব্যাংকের রাজনীতি। আসামে যারা বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলমান, তারা কংগ্রেসকে ভোট দিত। এতে ওই অঞ্চলের আঞ্চলিক দলগুলো রাজনীতি করতে পারতো না। স্থানীয় আসামি লোকরা ধীরে ধীরে সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে থাকলো। তাদের ব্যবসা বাণিজ্য ও ভূমি দখল করতে থাকে বাংলা ভাষী হিন্দু ও মুসলিমরা। তখন স্থানীয় আসামিদের মনে শুরু হয় এক অন্য ধরনের ভীতি। আর এই ভীতিকে কাজে লাগিয়ে সেখানে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি।
বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে আসামিদের বুঝিয়ে আসছে তাদের ভোট দিলে আসামের মালিক আসামবাসীই হবে। বাংলা ভাষী হিন্দু ও মুসলিমদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তাদেরকে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। বিজেপির এ কথায় ভরসা রাখে আসামবাসী। তারা বিজেপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। আর ক্ষমতা পোক্ত করার জন্য বিজেপি আসামে সেই একই ভোটব্যাংকের রাজনীতি শুরু করে, যা এতদিন আসামে কংগ্রেস করে আসছিল। তারা এনআরসি দ্রুত বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলমানকে আসাম ছাড়া করে দেয়। এতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই ৪০ লাখ লোক নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এতে কংগ্রেস ও সমমনা দলগুলো ওই রাজ্যে গো হারা হারবে। অন্যদিকে আসামের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের ভরসা তৈরি হবে বিজেপির ওপর। এই হচ্ছে আসামে এনআরসি প্রকাশের মাজেজা (আসল কাহিনী)।

No comments