বেটিং ও ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারির কারণে ক্রিকেট খেলা দেখা ছেড়ে দিয়েছি দীর্ঘদিন। ক্রিকেট নিয়ে এক সময় যে আগ্রহ ছিল এখন তা আর নেই। তারপরও বহুদিন বাদে টিভিসেটের সামনে বসলাম বাংলাদেশ-ভারত এশিয়া কাপ ফাইনাল দেখতে। আর আহত হলাম লিটন কুমার দাসের আউট ঘোষণা দেখে। সেই আউট সঠিক না বেঠিক তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তোলপাড়।
এমন কি পরদিন রাস্তাঘাটেও এ নিয়ে তুমুল তর্ক চলছে একজনের সঙ্গে আরেকজনের। লিটনের বিতর্কিত আউটের কারণে বাংলাদেশের স্কোর ২২২ রানে থেমে যায়। সেটা না হলে কি হতো সেই কথায় নাইবা গেলাম। তারপরও কিছু কথা বলতে হয়। ক্রিকেটকে স্বচ্ছ করতে আনা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়া যায়, তবে মানুষ কি উপায় অবলম্বন করবে?
লিটন আউট হয়েছে স্ট্যাম্পিংয়ে। নিজের ক্রিকেট জীবনে বহুবার উইকেট কিপার হয়ে স্ট্যাম্পিং করে আউট করেছি। নিজে আউট হয়েছি। তখন নিয়ম হিসেবে জানতাম ক্রিজের বাইরে গেলেই এ ধরনের আউট ঘোষণা করে উইকেট থেকে দূরে থাকা স্কোয়ার লেগ আম্পায়ার। আর সেই স্কোয়ার লেগ আম্পায়ার ক্রিজের সীমানা নির্দেশ করা দাগকে ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত দেন।
দাগের বাইরে পা চলে গেলেই স্ট্যাম্পিং করা যায় অন্যথায় নয়। কখনই শুনিনি দাগের মধ্য পা রাখলেই স্ট্যাম্পিং করা যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে ও ভারতের কয়েকটি পত্রিকা আইসিসির নতুন নিয়মের ফিরিস্তি দিয়ে বলে লিটন আউট হয়েছে আইসিসির নতুন নিয়মে। যেখানে বলা হয়েছে দাগের ওপর ব্যাটসম্যানের শরীরের কোনো অংশ বা ব্যাটের অংশ থাকলে সেটা আউট হিসেবে বিবেচিত হবে। আমি এখনো নিশ্চিত না এটা সত্য কিনা।
ধরেই নিলাম এটা সত্য। তাহলে প্রশ্ন? ক্রিজের সীমানা নির্দেশকারী দাগ বলতে আমরা কি বুঝি? কিংবা একজন দৌড়বিদ যখন ১০০ মিটার দৌড় দেয় সেই দৌড়ের সীমানা বলতে কি বুঝি? সীমানা তো তাকে বলে যেখানে সীমানার দাগ আকা হয়। যে এটাই শেষ সীমানা। এর বাইরে গেলে সেটা আর সীমানা নয়। তার মানে সীমানা দাগ পর্যন্ত বৈধ তার বাইরে নয়।
এখন ক্রিজের সীমানা দাগে লিটন থাকলে সেটা অবৈধ হলো কীভাবে? আর যদি সেটা অবৈধ হয় তবে প্রশ্ন ক্রিজের সীমানা দাগ অবৈধ জায়গায় আকা হলো কেন? তাই যেখানে ক্রিজের সীমানা দাগ আকা হয়েছে সেটা কখনই অবৈধ হতে পারে না। তাই তাকে স্পর্শ করে থাকা ব্যক্তি আউট নয়।
এখন আইসিসি যদি নতুন নিয়মে তাকে আউট ঘোষণা করে তবে সেটা কিসের যুক্তিতে? একটা নিয়ম করব তার পিছনে তো যুক্তি থাকতে হবে। মনগড়া নিয়মের কি কোনো স্থান আছে কোথাও? নতুন নিয়মমতো দেখছি মনগড়া। যার পিছনে কোনো যুক্তি নেই। এসব মনগড়া নিয়ম সম্পর্কে কেউ অবহিত নয়। হওয়ার কথাও নয়। এসব নিয়ম যদি মানা হয় তবে মানতে হবে ১০০ মিটার দৌড়বিদকে সবার আগে ১০০.১ মিটার অতিক্রম করলে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে হবে। সবার আগে ১০০ মিটার অতিক্রম করলে হবে না। তাই নয় কি?
আইসিসি আজ ভারতের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়েছে। যে কারণে আইসিসির দ্বারা বার বার প্রতারিত হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। আইসিসির দুর্নীতিগ্রস্থ ক্রিকেট আম্পায়াররা নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত। জুয়ায় জড়িত।এমন বহু প্রতিবেদন মিডিয়ায় ছেপেছে। এমন একটি সংস্থা আজ পর্যন্ত ক্রিকেটকে স্বচ্ছ করতে পারল না। মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশই।
লেখক সাংবাদিক
No comments:
Post a Comment