Tuesday, October 2, 2018

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পক্ষে জয়-হাসিনার সাফাই, তার জবাব



ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পক্ষে সাফাই যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। 

শেখ হাসিনা সংসদে ডিজিটাল আইন সম্পর্কে বলেন, এই আইন করা হয়েছে ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য। বাচ্চারা আজকাল স্মার্ট ফোন নিয়ে খেলে। এসব মাধ্যমে যাতে খারাপ কিছু না আসে সে জন্য এই আইন। 

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, মানুষের যাবতীয় তথ্য মানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, সম্পত্তির দলিল ইত্যাদি আজকাল ডিজিটাল করা হচ্ছে। এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকা উচিত। তাছাড়া ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নামে মানহানিকর বক্তব্য রোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আর পুলিশের ক্ষমতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রচলিত আইনের ফৌজদারি কার্যপ্রণালীর কথা বলেন তিনি। যেখানে পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। জয়ের এসব বক্তব্য মঙ্গলবার এক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। 

বস্তুত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়।  মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় আশয়ের গোপনীয়তা রাষ্ট্র রক্ষা করিবে। এটা বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের লেখা আছে। এজন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান সবাইকে সব তথ্য দেয় না। উদাহরণ স্বরূপ আমার ব্যাংক হিসাব নম্বর ও তার হিসাবে কত টাকা আছে। সেটা আমি ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারবে না। ব্যাংক এই তথ্য অন্য কারো কাছে শেয়ার করবে না। সংবিধানে ব্যক্তির গোপনীয়তা আইন থাকায় এমন আইন ব্যাংক মেনে চলে। সুতরাং এ জন্য ডিজিটাল আইন করা অপ্রয়োজনীয়। 

আজকাল সরকারি কয়েকটি সংস্থা নানা মানুষের অডিও বার্তা প্রকাশ করে ব্যক্তি গোপনীয়তা  আইনটি লঙ্ঘন করে চলেছেন। কারো ফোনে আড়ি পাতা যে অপরাধ সেটা হয়ত তারা জানেন না।  

এই ডিজিটাল আইন দিয়ে হ্যাকিং ঠেকানো যায় না। এর বড় উদাহরণ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি কি ডিজিটাল আইন না থাকার কারণে হয়েছে? তাছাড়া ওই ঘটনায় হ্যাকিংয়ে কোনো তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছে সুইফট কোম্পানি। যারা ব্যাংকের রিজার্ভ নিরাপত্তায় জড়িত। ডিজিটাল আইন থাকলে কি এ ধরনের চুরি ঠেকানো সম্ভব ছিল? নিশ্চয় না।    

 সম্পত্তির নথি যতই ডিজিটাল করুন। সম্পত্তি বিক্রির আগে  বায়না চুক্তি করতে হয় কিংবা দলিল তৈরি করে দু পক্ষের আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। এরপর রেজিস্ট্রেশন নামজারি এসব করতে হয়। এ কাজগুলো ডিজিটালি করা যায় না। তাই কারো সম্পত্তির দলিলের তথ্য পেয়ে তা নিয়ে নয় ছয় করা সম্ভব নয়। এতে ব্যক্তি জাল জালিয়াতির মামলার সম্মূখীন হবে। সেটা প্রচলিত আইনেই আছে। এখানে ডিজিটাল আইন অপ্রয়োজনীয়। সম্পত্তির দলিলের নথির ধুয়া তুলে যারা ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের পক্ষে সাফাই দেয় তারা বোকার স্বর্গে বাস করে।

 তাছাড়া সরকারি এসব নথি কিংবা দলিল যে কম্পিউটারে রাখা হয় বা সার্ভারে রাখা হয় তাতে নিরাপত্তা দেয়া থাকে। সিকিউরিটি লক থাকে। ওসব কম্পিউটার সাধারণ লোক ব্যবহার করতে পারে না। আর ওসব কম্পিউটারের সার্ভার নেটওয়ার্কে সবার অ্যাকসেস থাকে না। যাদেরকে অ্যাকসেস দেয়া হয় শুধু তারাই এসব দেখতে পারে। যেমন আমার আইডি কার্ড আসল না নকল কিংবা আমার নামে এনবিআরে কিছু পাওনা আছে কিনা তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব অ্যাকসেস কোড ব্যবহার করে জেনে যায়। এটা ওই ব্যাংকই করতে পারবে, যাদেরকে এটা দেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সাধারণ লোক  এটা করতে পারবে না। তাই সাধারণ লোক এসব তথ্য হাতিয়ে নিতে পারবে না। যদি না সরকারের কেউ এতে সাহায্য করে। তাই এসব রক্ষার জন্য ডিজিটাল আইন অপ্রয়োজনীয়। আর এটা করলে ওই ব্যক্তিকে প্রচলিত আইনেই সাজা দেয়া যায়।    

ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই মানহানি মামলা করা যায়। এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লাগে না। বাংলাদেশে একাধিক পত্রিকার সম্পাদকের নামে আদালতে মানহানি মামলা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিজিটাল আইনের প্রয়োজন পড়েনি।

তাছাড়া যারা ডিজিটাল মাধ্যমে মিথ্যা কিংবা কুরুচিকর তথ্য ছড়ায় তারা বিদেশে থেকে কিংবা ফেক আইডি দিয়ে এসব কাজ করে। আর এতে ব্যবহার হয় ফেসবুক ও ইউটিউবের মত মাধ্যম। এই দুই মাধ্যমের ওপর বাংলাদেশ সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে এসব ঠেকানো সম্ভব নয়। এটা একটা শিশুও বোঝে কিন্তু বোঝে না বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী জাতির জনকের নাতি জয়। 

পরিশেষে বলতে চাই ডিজিটাইল আইন বাতিল করুন। অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ দিন। তথ্য ভুল হতে পারে আবার সঠিক হতে পারে। তথ্য আদালতের রায় নয়। শোনা কথার ওপরই অনেকে সংবাদ লেখে। কারণ সাংবাদিকের চোখের সামনে সব ঘটনা ঘটে না। তাই সংবাদ লিখতে যেয়ে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। এখন এই ভুলের জন্য যদি সাংবাদিককে ডিজিটাইল আইনের গ্যারাকলে ফেলা হয় যা ইতিপূর্বে ৫৭ ধারার ক্ষেত্রে হয়েছে, তখন আপনারাই বলবেন এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। একে বিলুপ্ত করা দরকার। বাংলাদেশে দেখা গেছে রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে লিখতে গেলে তারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের সুরক্ষা বিলুপ্ত হবে। তারা মাসের পর মাস জেলে বসে থাকবে।  

No comments:

Post a Comment