নির্বাচনের বছরে দেশের সুশীলরা চুপ কেন? এই প্রশ্নের উত্তর মিলল ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে। এদিন উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে একটি গোল টেবিলের আয়োজন করে "দি ঢাকা ফোরাম" নামের একটি সুশীল সংগঠন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যিনি বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিযুক্ত হয়ে কেয়ার টেকার গর্ভমেন্ট ও শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদ পর্যন্ত ছিলেন। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যতদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন ততদিন বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে কোনো বিতর্ক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি। অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, উন্নয়ন গণতন্ত্র থেকে আলাদা কোনো বিষয় নয়। দুটো এক সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দেশে দারিদ্র কমেনি। উন্নয়ন শব্দটির অস্পষ্ট ব্যবহারের ফলে অনেক সময় মূল সমস্যা দারিদ্র আড়ালে থেকে যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর যতগুলো সরকার এসেছে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু করেছে। তাই উন্নয়নের কৃতিত্ব সবার। এখানে একক কারো কৃতিত্ব নেই। আবার দোষ যদি হয়। সেটার দায়ভারও সকলের। এককভাবে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না।
তিনি বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে তবে সেটার সবার ক্ষেত্রে নয়। উন্নয়নের লাভ একেক জনের কাছে যাচ্ছে একেক পরিমাণে। ধনী গরিবের ব্যবধান বেড়েছে। একই কর্ম দক্ষতার লোক রাজনৈতিক সুবিধা পেয়ে অথবা দুর্নীতি করে কয়েক হাজার কোটির টাকার সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছে। এই অসম উন্নয়নটা অ্যাকসেপটেবল নয়। দেশে সুশাসনের অভাব আছে। সুশাসন অভাব মানে স্বচ্ছতা নেই, জবাবদিহিতা নেই। কেউ যদি অন্যয় করে তার শাস্তি হয়না। সব থেকে মারাত্মক হলো রুল অব ল নেই। আইন আছে কিন্তু এর বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। খালি ভোট দিলাম হয়ে গেল। এতেই সবকিছু শেষ হয় না। অনেকেই বলেন, কোনো কোনো দেশে মার্শাল ল ছিল, স্বৈরাচার ছিল। উন্নয়ন হয়েছে। গণতন্ত্র ছাড়া। আমরা বলি গণতন্ত্র ছাড়া যে উন্নয়ন তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সেখানে ১০ থেকে ২০ বছর পর দেখা গেছে বেশিরভাগ লোকই দরিদ্র। আর উন্নয়ন বলতে শুধু জিডিপি বোঝায় না। কিংবা পার ক্যাপিটা ইনকাম। বর্বর দেশ মিয়ানমারও পার ক্যাপিটা ইনকাম আমাদের চাইতে ওপরে।
প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, এখানে উন্নয়ন ও সুশাসন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দূষণ নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই কেন? দূষণের মাত্রা যেভাবে বেড়ে চলছে সেটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল। আর উন্নয়নের যে কথা বলা হচ্ছে, এসবই ফেব্রিকেটেট। এগুলো বহুভাবে বাড়ানো কমানো যায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিল। অথচ শেখ হাসিনাসহ সবারই দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। এমনকি তিনি তার নির্বাচনি মেনিফেস্টোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের কথাটি বলেননি।
প্রফেসার দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশে একটি দল উন্নয়নের ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দেশে সহিংসতা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। খুন হচ্ছেন, ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অথচ সরকারের সেদিকে তেমন কোনো নজর নেই। খুব সহজেই এগুলো করা যাচ্ছে। সুশীল সমাজ আজ বিভক্ত হয়ে গেছেন। তাদের একেক জন একেক রকম কথা বলছেন। আজ গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, দেশে আজ মিথ্যার রাজনীতি চলছে। কোন দেশে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হয় না। প্রতিবেশী দেশেও হয় না। সরকারকে এ কথা বললে তারা বিচারপতির রায় এসব দেখায়। যিনি এই রায় লিখলেন তিনি কি এটা বুঝে লিখেছেন। তাকে বিচারপতি বানিয়ে দেয়া হয়েছে তিনি বিচারপতি হয়ে গেছেন। তার কি কোনো ধারণা নেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হয় কীভাবে? সরকার সংবিধানের দোহাই দেয়। আমি বলি এই সংবিধান আপনাদের কাছে রেখে দেন। জনগণের যে সংবিধান সেটার কথা বলেন।
তিনি বলেন, পুলিশ দুর্নীতিবাজ। পয়সা দিয়ে তাকে কাজ করানো হয়। টিআইবি রিপোর্ট অনুসারে তারাই চ্যাম্পিয়ন দুর্নীতিবাজ। আরেকজন নেতা জনগণকে ভয় দেখাচ্ছে। তারা ক্ষমতা থেকে সরে গেলে লক্ষাধিক লোক মারা যাবে। এভাবে ভয় দেখাবেন না। আসুন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করুন। শান্তিতে সবাইকে থাকতে দিন।
No comments:
Post a Comment