Header Ads

Header ADS

জামায়েতের দোসররাই মাসুদা ভাট্টির নিন্দা চর্চাকারী



শাসক সরকারের দালালি করার জন্য এক সময় বলা হতো, বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন) বিবি গোলামের বাক্স। বর্তমানে এই স্ট্যাটাস এখন প্রতিটি প্রাইভেট চ্যানেলের। অধিকাংশ টিভি চ্যানেল সরকার ঘনিষ্ঠ লোক দ্বারা পরিচালিত ও তাদের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত। এজন্য দালালিতে ব্যস্ত থাকে টিভি চ্যানেলগুলো। এসব চ্যানেলে যাদের সংবাদকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তারা সবাই সরকারের তোষামোদে ব্যস্ত থাকে। যেটা প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বেশি চোখে পড়ে। 

বাংলাদেশের মিডিয়ায় এখন প্রতিযোগিতা চলছে চামচামির। কে বেশি উন্নতমানের চামচামি করতে পারে সেটাই এখন বিবেচ্য। অন্যদিকে সরকারের সমালোচনাকারী মিডিয়া ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। কিছু বলতে চাইলেও তারা তা বলতে পারে না। কখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এসে তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এই ভয়ে থাকে তারা। বাংলাদেশে আজ সরকারের সমালোচনাকারী কোনো মিডিয়া নেই। 

এক সময় দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, এনটিভি, আর টিভি, ওয়ান চ্যানেল বিএনপি-জামাতের টিভি বলে পরিচিত ছিল। এখন তারা নেই। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এসব টিভি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর যেগুলো আছে, সেগুলো এমন লোকের হাতে দিয়ে দেয়া হয়েছে, যারা সরকারের নেতিবাচক কোনো নিউজ প্রকাশ করে না। অন্য টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। 

বাংলাদেশে জামাত-বিএনপির যেসব মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো এখন ইউটিউবে জায়গা করে নিয়েছে। ইউটিউবে চ্যানেল খুলে এরা দিব্যি নিজেদের মতবাদ প্রচার করছে। আজ যদি জামাত বিএনপির টিভিগুলো বন্ধ করে না দেয়া হতো, তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মীদের চরিত্র এভাবে হনন হতো না। 

ঘটনার সূত্রপাত বিশিষ্ট কলামিস্ট মাসুদা ভাট্টির সঙ্গে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কথোপকথন নিয়ে। সাংবাদিকের কাজ আমন্ত্রিত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা। যেটা মাসুদা ভাট্টি করেছেন। আর যে প্রশ্নটি তিনি করেছেন, সেটিও প্রাসঙ্গিক। কারণ আজ বিএনপি-জামাত নিজেদের মতবাদ প্রচার করতে ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি গণমাধ্যম বেছে নিয়েছে। আর সেটিকে কোট করেই তিনি প্রশ্নটি করেছেন। 

মাসুদা ভাট্টি সহজ সরল ভাষায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রশ্ন করেন, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে ঐক্য-ফ্রন্টে আপনি জামায়েত ইসলামির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন কিনা। 

এই প্রশ্ন করার পিছনে কারণ আছে। সবাই জানে মইনুল হোসেন নিরপেক্ষ লোক। তিনি কোনো দলের পক্ষভুক্ত নন। এখন তিনি জামায়েতের হয়ে ওকালতি করছেন কিনা সেটা জানা জরুরি। কারণ মানুষের মন সব সময় এক রকম থাকে না। মইনুল হোসেনের উচিত ছিল এই প্রশ্নের সোজা সাপটা উত্তর দেয়া। 

কিন্তু মইনুল হোসেন এসব না করে উল্টো প্রশ্নকর্তাকেই ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন। যা ছিল অত্যন্ত অশোভনীয়। 

মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টিকে বলেন, কত বড় দু:সাহস আপনার। আমি আপনাকে চরিত্রহীন বলে মনে করতে চাই। এটা কেমন উত্তর? কারণ মইনুল হোসেনের চরিত্র নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেনি।

মইনুল হোসেন খালেদা জিয়াকে অশিক্ষিত মহিলা ও শেখ হাসিনার কটু সমালোচনা করে নিরপেক্ষ ইমেজ তৈরি করেছিলেন। এখন সেই ইমেজে জামায়েত ইসলামি ভর করেছে। তিনি শিবিরের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেকে তাদের একজন বলেছেন। তাই এ ধরনের প্রশ্নে তিনি কেন উত্তেজিত হলেন? প্রশ্নটাতো অপ্রাসঙ্গিক নয় মোটেই। মইনুল হোসেনের উচিত ছিল ওই অনুষ্ঠানেই মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি তা করেননি। লুকিয়ে টেলিফোনে ক্ষমা চাওয়া পাপী মানসিকতার পরিচায়ক। 

প্রকাশ্যে মাসুদা ভাট্টিকে যদি তিনি বলতেন আমি লজ্জিত। আই এম সরি ফর দ্যাট। তাতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ইমেজ আরো বাড়তো। কিন্তু তার দাম্ভিকতা সেটা হতে দিল না। এখন তিনি জেলের ভাত খাচ্ছেন। এখন কোথায় গেল তার দাম্ভিকতা? সবকিছু ধূলায় মিশিয়ে দিলেন তিনি নিজে। 

মাসুদা ভাট্টি এক সময় দৈনিক জনকণ্ঠে নিয়মিত কলাম লিখতেন। এখন লিখেন কিনা জানি না। তবে অনলাইন জগতে সাংবাদিকতার করার কারণে তার লেখা বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে পাই। আমি পড়ি। তার লেখার সূত্রেই আমি তাকে চিনি। তিনি শেখ হাসিনাকে ডিফেন্ড করে লেখেন। এজন্য তার ওপর ক্ষোভ জামাত বিএনপি গোষ্ঠীর। কিন্তু যারা সাংবাদিক তাদের কেন ক্ষোভ মাসুদা ভাট্টির ওপর সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কয়েকজন সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির ঘটনা আলোচনা না করে তার ব্যক্তি জীবন সামনে টেনে নিয়ে আসছে। তার লেখার সমালোচনা করছে। আজব। এখানে মইনুল-ভাট্টির কথোপকথন নিয়ে আলোচনা অথচ ধান্দাবাজ সাংবাদিকরা তার পরিবার, ব্যক্তি জীবন এসব টেনে আনছেন। এটা কি উচিত? মাসুদা ভাট্টির উচিত এসব ধান্দাবাজ সাংবাদিকদের ওপর মানহানির মামলা করা।  

 ভূমিদস্যু খ্যাত এক লোকের সৃষ্ট পত্রিকায় জন্ম নেয়া কলামিস্ট বলে দিলেন, মক্কেল নাই ব্যারিস্টার আর পাঠক নাই কলামিস্ট। তিনি যে কত বড় ধান্দাবাজ সাংবাদিক সেটা নিজেই প্রমাণ করেছেন এক অনলাইন পোর্টাল ডুবিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। কড়িহীন অবস্থায় বিদায় নিতে হয় সেই পোর্টালের সাংবাদিকদের।

 পাপী মইনুলের সমালোচনা করতে গিয়ে যারা মাসুদা ভাট্টির সমালোচনা করে তারা এই পেশার কলঙ্ক।  কথায় আছে রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে নেপয় মারে দই। এসব তথাকথিত সাংবাদিক হচ্ছে ওই দই মারা ধান্দাবাজ সাংবাদিক। 

তসলিমা নাসরিন আক্রোশবসত মাসুদা ভাট্টির বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। তসলিমা নাসরিনের ক্ষোভ থাকতেই পারে। সেটা অস্বাভাবিক কিছু না। কারণ বাংলাদেশে যারা মৌলবাদ বিরোধী কণ্ঠ তারা তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে নীরব। এর কারণ হয়ত আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী মহলে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের চরিত্র তসলিমাতে শেষ হয়েছে। কিন্তু যাদের চরিত্র তসলিমাতে শেষ হয়নি তারা কেন লেখে না? 

তসলিমা নাসরিনকে আমি চিনি তখন যখন তসলিমা নাসরিন ছিলেন ট্যাবলয়েড ম্যাগাজিনের উপাদান। সেই ৮০র দশকে। তাসলিমা তখন লেখালিখিতে নেই। সেই খবরের শিরোনাম ছিল এমন ‘তসলিমার অহংকার, বিয়ে করে বার বার’। যার টেবিলে এই ম্যাগাজিনটা পাই তিনি এখন একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তার পরিচিত আরেক ভাই খ্যাতনামা সাংবাদিক। ড. মুনতাসির মামুনের জানি দোস্ত। হাল আমলের এই খ্যাতনামা সাংবাদিকের সামনে নাকি তাসলিমা সারাদিন পড়ে থাকতেন। এমন দাবি তাদের। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না হলে পড়ে থাকতেন না নিশ্চয়। তো তসলিমা নাসরিন ওই লোকটার নামে কেন লেখে না? কারণ শেখ হাসিনার দালালিতে ওই লোক এখন শীর্ষ স্থানীয়। তার সব রাগ কেন মাসুদা ভাট্টির ওপর?  

আজ যারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তারা তসলিমা নাসরিনের জন্য কেন বলতে সাহস পান না? তসলিমা নাসরিন ভারতে কেন লুকিয়ে থাকবে? তার জন্মভূমিতে নয় কেন?  যেভাবে আজ র‍্যাব পুলিশ জঙ্গি খতম করছে। তাতে বাংলাদেশে কারা তসলিমা নাসরিনকে হত্যা করবে? কোন যুক্তিতে তসলিমা নাসরিন আজ দেশের বাইরে? তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে জামাতিদের অভিযোগ। অন্য ইসলামী দলগুলো তসলিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কি? আর অভিযোগ করলেই বা কি? দেশে জঙ্গিবাদ নেই। এই সত্য যদি প্রতিষ্ঠা করতে চান তসলিমাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। বাংলাদেশ ধর্মতান্ত্রিক দেশ নয় যে মোল্লাদের হুমকি শুনে তসলিমাকে দেশে ঢুকতে দেয়া যাবে না। এদেশ হিন্দু মুসলিম খ্রীস্টান বৌদ্ধ নাস্তিক আস্তিক হিজরা সবার। প্রমাণ করুন এটা গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ।  

 মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে বেফাস ও নোংরা মন্তব্য করেছেন মিনা ফারাহ নামের এক নারীবাদী লেখিকা। ইউটিউবে এই নারীর অসংখ্য ভিডিও পোস্ট যে কেউ দেখতে পারেন। সিফাতুল্লাহ পর যার ভিডিও জামাতি বিএনপি মহলে বেশি আলোচিত, তিনি এই মিনা ফারাহ ওরফে মিনা রাণী সাহা। এখন নিয়মিত লিখেন জামাতি পত্রিকা দৈনিক নয়া দিগন্তে। আগে লিখতেন দৈনিক জনকণ্ঠে। এই নারী হতে পরে সাংবাদিকদের গবেষণার বস্তু। ডিগবাজ রাজনীতিবিদ হিসেবে যেমন খ্যাতি আছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের। তেমনি ডিগবাজ কলামিস্ট হিসেবে খ্যাতি এই মিনা ফারাহর। পারিবারিক জীবনেও তিনি অনেক ডিগবাজি দেখিয়েছেন। আর সেই তিনি করেন কলামিস্ট মাসুদা ভাট্টির সমালোচনা। যিনি এখন পর্যন্ত তার মতো ডিগবাজি দেননি। ভবিষ্যতে দেবেন কিনা সন্দেহ।

অনেক নব্য জামাতি মিনা ফারাহ সম্পর্কে জানেন না। তাদের জন্য এই তথ্যগুলো প্রকাশ করলাম। আশাকরি ইউটিউবে এসব দিবেন নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে লেখা।

মিনা ফারাহ পেশায় একজন দন্ত চিকিৎসক। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিয়ে করেন এক মুসলিম ব্যক্তিকে। মুসলিম নাম নেন কিন্তু নামাজ রোজা এসব পালন করেন না। ছেলেকে মুসলিম বানিয়ে প্রচার করার মুহূর্তে মৃত্যু হলে তাকে হিন্দু শাস্ত্রমতে দাহ করা হয়। এতে নিউইয়র্কে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন কট্টর জামাত বিরোধী ইমেজ থাকায় তিনি সাহায্য পান নিউইয়র্কের হিন্দু সংগঠনের নেতাদের যাদের মধ্যে সিআর দত্তের মেয়ের জামাই অন্যতম। এক সময় জামাতি নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি চেয়ে বিস্তর লেখালেখি করেন। পরে বিচার শুরু হলে মুখে কুলুপ আটেন। উল্টো জামাতি প্রচার মাধ্যম নয়া দিগন্তে যোগ দেন। অথচ এর আগে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে নিয়মিত জামাত বিএনপি বিরোধী লেখা দিতেন। হিটলার থেকে জিয়া এমনই একটি গ্রন্থ তার। জামাতের আমেরিকান শাখা এই নারীকে দিয়ে মনের ইচ্ছা মত কথা বলিয়ে নিচ্ছে। যা ইউটিউবে ছাড়া হচ্ছে। মানসিক বিকারগ্রস্ত এই নারীর সবকথাই ভুয়া। এটাই সত্য।

পরিশেষে বলতে চাই । সমালোচনা করুন ঘটনার। অন্য বিষয়ের নয়। কারণ আজ যারা সেলিব্রিটি হয়ে টিভিতে আসেন তাদের অনেক খবর অনেকে জানেন। কে কীভাবে কারে ধরে মিডিয়ায় এসেছে এসব বলে কি লাভ? কে বাড়ি গিয়ে কি খায়? কার সঙ্গে ঘুমায়, এসব বলে কি লাভ? কে কাকে বিয়ে করেছে কেন সন্তান নাই। এসব শুনে কি লাভ? প্রত্যেকের জীবনে এমন অনেক দু:খ আছে যা তারা কাজের মাধ্যমে  লুকিয়ে রাখে। এই আইয়ুব বাচ্চুর কথাই ধরুন। যার হার্ট ছিল ৩০ শতাংশ কার্যকর অথচ তার সহকর্মীরা তা জানতো না। মারা যাবার আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। দু:খময় জীবন ছিল তার। অথচ লক্ষ মানুষকে বিনোদন দিয়ে গেছেন। একবারও কাউকে জানতে দেননি তার বেদনা ও দু:খ। তাই কারো ব্যক্তি জীবন নিয়ে ঘাটাঘাটি করা উচিত নয়। এটা পাপ।

লেখক সাংবাদিক


No comments

Theme images by wingmar. Powered by Blogger.