Header Ads

Header ADS

খবরের মূল বক্তব্য উধাও, মনে হবে আমি মিথ্যা লেখলাম


বাংলাদেশে হিন্দুরা কেমন আছে। সেটা জানার আগ্রহ আছে অনেকের। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরাবাসীদের মধ্যে। কারণ বাংলাদেশের  হিন্দুদের একটি বড় অংশ ভারতের ওই সকল রাজ্যে বাস করে। কোনো একটি শ্রেণি সম্প্রদায়ের খোঁজ খবর নিতে গেলে লোকজন গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকেই বেছে নেবেন বিদেশিরা।

 বাংলাদেশের গণমাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের খবরগুলো ঠিকমত প্রচার করছে কিনা সেটাও জানা উচিত। সাংবাদিকতায় আছি দীর্ঘদিন। গণমাধ্যমের মালিকের পলিসি, সম্পাদকের পলিসি পরিশেষে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পলিসি। এই তিন গোষ্ঠী স্বার্থের চিন্তা করেই পত্রিকায় খবর বের হয়। যেদেশে গণতন্ত্রের বদলে ধামাচাপাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় সেখানকার গণমাধ্যমে এসব পলিসি থাকে। আজকের দিনে তারই একটি উত্তম উদাহরণ পেলাম।গত ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। 

সম্মেলনের মূল এজেন্ডা ছিল ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেহাত হয়ে যাওয়া ১৪ বিঘা জমি উদ্ধারের। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তব্যে এ কথা জোর দিয়ে বলেন। অথচ দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলো এই বক্তব্য এড়িয়ে যায়। 

২১ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক সমকাল, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক যুগান্তর, বাসস এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সম্মেলনের ছবিও প্রকাশ করে কেউ কেউ। উল্লিখিত পত্রিকার একটিতেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেহাত হয়ে যাওয়া জমির কথাটি আসেনি। অথচ সম্মেলনের মূল স্লোগান ছিল ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি ফেরত দাও। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এ নিয়ে বক্তব্যও রাখেন। তাদের অন্যসব বক্তব্য প্রকাশ হলেও  সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বেহাত হয়ে যাওয়া ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি উদ্ধার সম্পর্কে উনারা কি প্রস্তাব দিয়েছেন সেটি।

 সবগুলো প্রিন্ট মিডিয়ার খবর আমার পড়া হয়নি। তবে কথায় আছে হাড়ির চাল ভাত হয়েছে কিনা তা একটি দানা উঠিয়ে টিপ দিলে বোঝা যায়। তেমনি উল্লিখিত পত্রিকার রিপোর্ট পড়ে আমার ধারণা এটি অন্য মিডিয়াগুলোতেও আসেনি। কেন আসেনি? এই প্রশ্নের উত্তর তারাই ভালো দিতে পারবেন যারা গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করেন। একটি সম্মেলনে মূল বক্তব্য কি সেটাই নিউজ হওয়ার কথা। বাস্তবে দেখা গেল বাসস, দৈনিক জনকণ্ঠ, সমকাল, ইত্তেফাক, যুগান্তর প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমকে নিয়ে নিউজের শিরোনাম করেছে।

 অসাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও হিন্দুদের নৌকা ছাড়া বিকল্প নেই। নৌকায় ভোট দিলে হিন্দুরা ভালো থাকবে। এসব বক্তব্য দৈনিকগুলোতে ঘুরে ফিরে বলা হয়েছে। সংবাদের লিংকগুলো দেয়া হলো। দৈনিক জনকণ্ঠের লিংক, দৈনিক ইত্তেফাকের লিংক, দৈনিক কালের কন্ঠের লিংক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের লিংক।

 খেয়াল করবেন কোনো প্রতিবেদনেই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি ফেরতের দাবির বিষয়ে এক লাইন বর্ণনাও নেই। এতেই বোঝা যায় বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনগুলোর খবর কতটা অবহেলার সঙ্গে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের খবর পড়ে কীভাবে জানবেন জাতীয় মন্দিরের ১৪ বিঘা জমি ভূমি দস্যুদের পেটে? বাংলাদেশে জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীর জমি আছে এ কথা স্বীকারই করতে চায় না দেশের মূলধারার পত্রিকাগুলো। অন্তত ঐসব পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে এমনটাই মনে হলো। আর ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির  উচিত ছিল এ নিয়ে একটি প্রতিবাদ ওই সব প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদককে জানানো যে তাদের মূল বক্তব্য কেন এড়িয়ে যাওয়া হলো। কারণ গণতান্ত্রিক সমাজে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে কেউ নন।   

লেখক সাংবাদিক সুমন দত্ত


          

No comments

Theme images by wingmar. Powered by Blogger.