Header Ads

Header ADS

বাংলাদেশে হিন্দু কি সত্যিই বেড়েছে?


ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মুখে বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে খবর শুনে খুশি হয়েছিলাম। আনন্দে গদগদ হই। পরক্ষণে আবার চুপসে যেতে হয় বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন শুনে। সুষমা স্বরাজের তথ্যটি যে ডাহা মিথ্যা তা বিবিসির প্রতিবেদনে পরিষ্কার হয়ে যায়। পাশাপাশি এটাও জানা যায় সুষমা স্বরাজ কাদের কাছ থেকে এই তথ্য কীভাবে নিয়েছেন। এ তথ্যের জন্ম কীভাবে হয়েছে সেটাও জানা যায়।

 বাংলাদেশে প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর আদম শুমারি হয়। বিগত দিনে  বাংলাদেশে যতগুলো আদম শুমারি হয়েছে তার প্রতিটিতে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে। এই তথ্য আমার না এটা সুষমা স্বরাজ যাদের কাছ থেকে নিয়েছেন সেই বাংলাদেশ পরিসখ্যান বুর‍্যের। তাদেরই এক কর্মকর্তা এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, হিন্দু জনগোষ্ঠীর বেড়ে যাবার তথ্যটি সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র না। এটা জরিপের হের ফেরে হয়েছে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর সন্তান হয় কম। তাই সংখ্যা বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। সংখ্যা বাড়ার কারণ হচ্ছে, জরিপে যে এলাকাগুলো নিয়েছে সেগুলোতে পূর্ব থেকেই হিন্দু জনগোষ্ঠী বেশি ছিল। সেটাকে গড় ধরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যাবৃদ্ধিটা দেখানো হয়েছে।  

 বাংলাদেশ সরকার আদমশুমারি করে ঠিকই। তবে ধর্ম ভিত্তিক সংখ্যাটা প্রকাশ করে না। আদমশুমারি শেষ হলে দেশের মোট জনসংখ্যা , নারী পূরুষের সংখ্যা ও অনুপাত, প্রতি বর্গমিটারে কতজন লোক বাস করে। এসবই জানানো হয়। বাকী সব তথ্য গোপন রাখা হয়। বিশেষ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম ভিত্তিক তথ্য শেয়ার করে কিনা আমার জানা নেই। তাই হঠাৎ হিন্দু জনগোষ্ঠীর বেড়ে যাবার তথ্য সুষমা স্বরাজের মুখে শুনে অবাক হয়ে যাই। গত ১৯ জুলাই ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় দেশটির নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল পাশের সময় সুষমা স্বরাজ এসব কথা বলেন।

 বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে এমন কথাও তাকে বলতে শোনা যায়। তবে যেভাবে তিনি এসব বক্তব্যের সাফাই দিলেন তাতে মনে হলো তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হয়ে কথা বলছেন। বাংলাদেশে ছোট-বড় বহু সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর প্রত্যেকটির বিচার এখনো শেষ হয়নি। এসব ঘটনার দায়ীরা জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। খুলনায় ও ভোলায় ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী যে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে তার বিচার এখনো শেষ হয়নি। এসব ঘটনার সঙ্গে পরবর্তীতে বহু ঘটনা ঘটে। শুধু যে হিন্দুরাই হামলার শিকার তা নয়। বৌদ্ধ ও খ্রীস্টানরা বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের যেসব হিন্দু সংগঠন আছে তাদের অভিযোগ প্রতিটি ঘটনার বিচার হলে নতুন করে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটত না।

পরিশেষে বলতে চাই বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধানরা বলে না সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করো। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া কিংবা এরশাদসহ অন্যরা এদের কেউ তাদের দলের লোকদের সাম্প্রদায়িক হামলা করতে বলে না কিংবা উসকানি দেয় না। 

সাম্প্রদায়িক হামলা করে স্থানীয় এলাকার সুবিধাবাদী নেতারা। যারা কোনো না কোনো গোষ্ঠীর পতাকা তলে থাকে। নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই এরা হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালায়। যাতে হিন্দু জনগোষ্ঠী এদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যায়। আর তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি এরা ভোগ দখল করবে। এই উদ্দেশেই হিন্দুদের ওপর হামলা হয়। আর এই সত্যটার সঙ্গে বাংলাদেশের সব শ্রেণির লোক অবগত।          

No comments

Theme images by wingmar. Powered by Blogger.