জামাতি রাজনীতিকে কেউ বাচাতে পারবে না
ব্রিটিশ আমলে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে সৃষ্ট সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর জামায়াতে ইসলাম সংগঠন পাকিস্তানের মানুষকে করেছে কট্টর সাম্প্রদায়িক। তেমনি বাংলাদেশেও মুসলমানদের মনেও কট্টর ভাবধারা এনেছে দলটি। অনেকে মওদুদীবাদকে সৌদির ওহাবীইজম বলে থাকে।
উগ্র এই গোষ্ঠী সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটায় ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলেয়ে তারা এদেশে গণহত্যা চালায়। ৩ লক্ষের মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করতে এরা পাকবাহিনীকে সহায়তা করে ও নিজেরা অংশ নেয়। তারপরও এদেশে জামাতিরা ইসলামের দোহাই দিয়ে রাজনীতি করে যায়। বঙ্গবন্ধু থেকে জিয়া-এরশাদ-হাসিনা-খালেদা জিয়া কেউ এ দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চিন্তা করেনি। বরং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মার্কিন ও সৌদি আরবের সহায়তায় জামাতিরা ফুলে ফেঁপে ওঠে।
এরশাদ পতনের আগ পর্যন্ত জামাতিরা এরশাদের সঙ্গে ছিল। জিয়া ও এরশাদের শাসনের সময় জামাতিরা বাংলাদেশে শক্ত ভিত স্থাপন করে। গড়ে তোলে জামাতি সাম্রাজ্য। সৌদি আরবের সাহায্যে এরা বড় বড় কোম্পানির মালিক হয়। প্রতিষ্ঠা করে ব্যাংক শিল্প কারখানা ইত্যাদি। এক সময় এরা বাংলাদেশে মন্ত্রী হয়। দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে গণহত্যা চালিয়ে দেশের মন্ত্রী হয়ে তারা বিশ্বে বিরল রেকর্ডের অধিকারী হয়। তেমনি মন্ত্রী হয়ে এরা ফাঁসি দড়িতে ঝুলে সেই পুরান অপরাধে। এটাও বিরল এক ঘটনা।
দেশের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে জামাতের ভোট ব্যাংক দিনে দিনে কমেছে। ১৯৯৬ সালে জামাত একা নির্বাচনে করে মাত্র ৩ আসন পায়। অথচ নির্বাচনে তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। জামানত হারিয়েছে অনেকে। এরপর বিএনপির কাঁধে ভর করে এরা টিকে আছে। কিন্তু এদের ভোট ব্যাংক কত সেটা বোঝা যায়নি। বর্তমানে দেশে নতুন ভোটার হয়েছে ২ থেকে ৩ কোটি। এখানে জামাতের ভোট নেই বললেই চলে। কারণ নতুন প্রজন্ম আর যাই হোক তারা জামাতকে ভোট দেবে না। গণজাগরণ মঞ্চ তাই প্রমাণ করে। যেভাবে সারাদেশে জামাতি রাজাকারদের ফাঁসি চেয়ে আন্দোলন হয় তাতে তাদের ভোট শক্তি অনেকটাই শেষ। জামাতি শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হওয়ায় আর দলের সাধারণ কর্মীরা আওয়ামী লীগে বিলীন হওয়ায় মাঠের ক্ষমতা হারিয়েছে তারা। যে কারণে এখন আর জামাতিদের নাশকতা করতে খুব একটা দেখা যায় না। ২০১৪ সালে যে জামাতিরা আগুন সন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছিল, তারা এখন নিখোঁজ। তাই বিএনপির মিটিংয়ে এখন জামাতিরা নেই।
বিএনপি জামাতকে ছাড়া না ছাড়া নিয়ে আছে দোটানায়। বিএনপি নেতারা বলেন জামাতের সঙ্গে তারা নির্বাচনী জোট করেছে। আবার তাদের চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া বলেন জামাতের রাজাকাররা রাজবন্দী। তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়ার এই বিবৃতি নির্বাচন কেন্দ্রিক জোটের সঙ্গে যায় না। আবার জামাতি নেতাদের ফাঁসি হলে বিএনপি দলগত ভাবে বিবৃতি না দিলে জামাতিরা বিএনপিকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। এই বিবৃতি না দেয়া ও হুমকি দেয়া প্রমাণ করে জামাতের সঙ্গে বিএনপির শুধু নির্বাচনী জোটই। তাই জামাতকে নিয়ে বিএনপির পলিসি কি তা দলটি নিজেই জানে না।
ভোটের হিসেবে জামাতের কোনো ভোট নেই। বর্তমানে জামাতের কোনো ভোট ব্যাংকই নেই। জামাত বিএনপি ছেড়ে বেড়িয়ে গেলে বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না। বরং জামাতকে রাখলেই দেশে বিদেশে জঙ্গিবাদের দোষে দুষ্ট হবে বিএনপি।
যে সৌদি আরব ও আমেরিকা একসময় জামাতিদের আদর আপ্যায়ন করত। এখন তারা জামাতিদের পারলে জুতা পেটা করে। সৌদি আরবে জামাতি ঘরানার ইমামদের চাকরি নেই। নতুন বাদশাহ ও তার ছেলে জামাতি ঘরানার ইমামদের চাকরি খেয়ে নিয়েছে। তাদের অনেককে উগ্রবাদ ছড়ানোর দায়ে জেলে ভরে রেখেছে। আমেরিকা বহু আগে বাংলাদেশের জামাতি নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। তারপরও জামাতিরা অনেকটা বেহায়ার মত এসব দেশের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে। কারণ জামাতিদের কেউ আশ্রয় দিতে চায় না। রাজনৈতিক সহায়তা দিতে চায় না।
জঙ্গিবাদের কারণে জামাত একঘরে হয়ে পড়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আগামীতে জামাতিদের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনেকে হয়ত বলবেন সিলেটে জামাতিরা ১০ হাজার ভোট পেল। সিলেটে ভোট হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ফল হয়নি। ফলটা পাতানো ছিল। রাজাকারদের ফাঁসির সঙ্গে সঙ্গে জামাতি রাজনীতিরও ফাঁসি হয়ে গেছে। তাই জামাতকে প্রকাশ্যে বিএনপি কিংবা তলে তলে আওয়ামী লীগ অক্সিজেন দিয়েও বাচাতে পারবে না।
No comments