যাদেরকে ধরতে পারেন না তিনি
আমি যাকে ধরি ভালো করেই ধরি। বাংলাদেশের শাসকের কথা এটি। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই আপনি ধরুন। যাকে ইচ্ছা তাকে ধরুন। ভালো করে ধরুন। শুধু অনুরোধ ধরার পর ছেড়ে দিয়েন না। যাকে ধরবেন তাদের দিয়ে রাঘব বোয়ালদের ধরুন। নেপথ্যের কুশীলব ধরুন। তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিন। জনগণ আপনার কাছ থেকে সেটাই আশা করে। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
বিগত দশ বছরের শাসনে আপনি নিজের পছন্দমত ব্যক্তিদের ধরেছেন। আর তাদেরকে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে জেলে পুরে রেখেছেন। জেলে পুরে আবার তাদেরকে পিজি হাসপাতালের প্রিজন সেলে আরাম আয়েশের জীবন দিয়েছেন। মাঝখান দিয়ে ওইসব অপরাধীদের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিরা পাইনি রাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপুরন। ডেসটিনি, ইউনিটুপে করে যারা লোকজনকে ঠকালো তাদের কি হলো? জাতি জানতে চায়। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যারা মুদ্রা নিয়ে গেল তাদেরকে ধরুন। পাচার করা মুদ্রা ফিরিয়ে আনুন। বিদেশি পত্রিকার রিপোর্ট মিডিয়ায় প্রকাশ করে দায় আরেক দেশের ওপর চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা কেন করা হচ্ছে? সত্যিকারের অপরাধীদের কেন ধরা হচ্ছে না? যারা ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তাদের কে কেন ধরা হচ্ছে না? বেসিক ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা লোপাটের পেছনে যারা আছে, তাদেরকে কেন ধরছেন না? দুই বছর হয়ে গেল আপনার হাত তাদের নাগালে কেন আসছে না?
আপনার ধরার হাত এতটাই দুর্বল যে আপনি ফুটপাত থেকে পারেন না হকার উচ্ছেদ করতে। আপনি পারেন না গণপরিবহণের মালিকদের সঙ্গে, যারা নিজেদের ইচ্ছামত চালক বানিয়ে জনগণকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করে বহাল তবিয়তে থাকে, জরিমানার টাকা পর্যন্ত দিতে চায় না। যারা গণপরিবহণ থেকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে চাদা তোলে তাদেরকে ধরুন। গাড়ি থামিয়ে যেই ট্রাফিক পুলিশ চাদাবাজি করে তাদের ধরুন। রাস্তায় ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যারা চাদা তুলে তাদেরকে কেন ধরছেন না।
ধরতে পারেন না সেই সব ব্যবসায়ীদের যারা প্রতি রোজার ঈদে জিনিষপত্রের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ায়। যারা খাদ্যে ভেজাল দিয়ে সাজা পেয়েও, আবার একই কাজ করতে থাকে। পারেন না সেই সব সরকারী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যারা প্রতি বছর রাস্তা ঠিক করার নামে অর্থ লোপাট করে। ভালো রাস্তা বার বার ঢালাই করে। আর খানাখন্দে পড়ে থাকা রাস্তা প্রকৌশলীর নজর এড়িয়ে থাকে। আপনি পারেন না সেই সব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের ধরতে যারা উগ্র জঙ্গি সংগঠনের লোকজনদের আপনার দলে ঢোকায়। আপনি পারেন না ব্লগার হত্যাকারীদের ধরতে ও তাদের বিচার করতে। আপনি পারেন না সেই সব তেতুলদের ধরতে যারা ব্লগার হত্যার তালিকা তৈরি করে। আপনি ধরতে পারেন না ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুর, চট্টগ্রাম,গাইবান্ধায় হিন্দুদের বাড়ি ঘরে আগুন লাগানো ও লুটপাট কারীদের ধরতে। আপনি পারেন না শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠবস করানো গডফাদার সংসদকে ধরে জেলে পুরতে। উল্টো আপনার আজ্ঞাবহ পুলিশ শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার চার্জশিট দেয়। আপনি ধরতে পারেন না তাদের যারা পাঠ্যপুস্তক থেকে হিন্দু কবি সাহিত্যিকের নাম কেটে দেয়।
আপনি মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করেছেন অপরাধ নির্মূলের জন্য। যাদেরকে ধরার দায়িত্ব দিয়েছেন তারা নিজেরাই এই অপরাধে অভিযুক্ত। আবার তাদের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে আমাদের কোনো কোনো সংবাদকর্মী নাকি এই ব্যবসায় জড়িত। অতি সত্বর তাদের নাম প্রকাশ করুন। তাদেরকে কেন ধরছেন না? সেই সব সাংবাদিকের নাম পরিচয় জাতি জানতে চায়। ওই সব সাংবাদিকের কাদের সঙ্গে ওঠা বসা, কারা ওদের সাংবাদিক বানিয়েছে জাতি সেটা জানতে চায়।
মাদক বিরোধী অভিযান সেই বাহিনী দিয়ে করা যেত যাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ নেই। অভিযুক্তদের দিয়ে এই লোক দেখানো অভিযান কতটা যুক্তিযুক্ত? দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। তাকে আপনি ধরে কেন ছেড়ে দিলেন? যেখানে আপনার হাতে একাধিক সাক্ষ্য প্রমাণ ছিল। আপনার ধরার হাত সেখানে কি কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল? জাতি সেটা জানতে চায়।
কানাডাকে দিয়ে কারা সন্ত্রাসী সংগঠন এটা বলানোর ক্ষমতা আছে। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্তদের ধরে আনার ক্ষমতা নেই। সুতরাং ধরার বড়াই না করাই উত্তম।
No comments