বাংলাদেশে ভালো কিছু চাওয়া পাপ
সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আওয়ামী লীগ বাদে সবাই চায়। কিন্তু সেটা হবে না। কারণ অন্য সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাই আওয়ামী লীগ কখনই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে অন্য সরকারের হতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। আর সেটা বুঝতে পেরেই ড.কামাল হোসেনের মত নাই পার্টির নেতারা বিএনপিকে নিয়ে ঐক্য তৈরিতে একাধিক শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
ড. কামাল হোসেন সাহেবদের প্রথম শর্ত ছিল জামায়াত বাদ। পড়ে জানা গেল এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তারেক জিয়া বাদ। অমুক দাবি করা যাবে না। অমুক নিয়ে বলা যাবে না ইত্যাদি। এসব হচ্ছে জোটে না যাবার উসিলা। কারণ বিএনপি জোটে গিয়ে কামাল হোসেনের মত নেতাদের ক্ষমতা নেই একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে বর্তমান সরকারকে বাধ্য করার। যেই শক্তিতে কামাল হোসেন সাহেবরা বলিয়ান, সেই একই শক্তিতে আওয়ামী লীগও বলিয়ান।
বাংলাদেশে আন্দোলনের শক্তি যেমন বিএনপি হারিয়েছে তেমনি ড. কামাল হোসেন ও মান্না ভাইয়ের মত নেতাদেরও একই অবস্থা। ২০১৪ সালে ড. কামাল হোসেন ও ইউনুস সাহেবরা বহু লাফালাফি করেছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এক তরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ সুন্দরভাবে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। এবারও সেই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে গেছে।
বিএনপি নির্বাচনে যাবো না-যাবো না রব করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে ঠেকায় কোন শক্তি? প্রেসক্লাবে বাম জোটের এক সভায় গিয়েছিলাম। বক্তব্য রাখছিলেন বিশিষ্ট কলামিস্ট বদরুদ্দিন উমর। বহু কথার মাঝে তিনি একটি কথা বলেন। যা আমার মনকে স্পর্শ করে। তিনি বলেন, শুনলাম এই সরকার ২০১৯ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছে। কারণ শেখ মুজিব ১৯১৯ সালে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি প্রস্তাব করেন, কেন মুজিব বর্ষ হবে? মুজিব শতাব্দী কেন নয়? এদেশের নাম পালটিয়ে মুজিব দেশ রাখা হোক। শেখ হাসিনাকে ঠেকায় কে? শেখ হাসিনার ক্ষমতা কোন পর্যায়ে গেছে সেটা তার এই কথাতেই প্রমাণ হয়ে যায়।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ হাজারটা অপরাধ করলেও কেউ তাকে কিছু বলবে না। কারণ সবাই এখন আওয়ামী লীগ। এখানে অন্য কেউ নেই। চোর-ডাকাত-গুণ্ডা-দালাল- মাদক ব্যবসায়ী- চিকিৎসক-আইনজীবী-সুশীল-সাংবাদিক সবই এখন আওয়ামী লীগ। সবাই দলটির প্রচার বাক্সে পরিণত হয়েছে। এদেশে কাউকে বাঁচতে হলে আওয়ামী লীগের দালালি করতেই হবে। এজন্য ইচ্ছা থাকলেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই।
এদেশে ভালো মানুষ হয়ে কেউ রাজনীতি করতে পারে না। বাম ও অন্য চেয়ার টেবিল মার্কা দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব সুশীল প্রস্তাবনা দিচ্ছেন, সেগুলো এদেশে কোনো দিনই বাস্তবায়ন হবে না। হওয়ার কোনো লক্ষণও নেই। কারণ যে দেশে দুর্নীতিই নীতি হয়ে দাড়িয়ে যায় সেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা পণ্ডশ্রম।
নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার, পেশি শক্তি, ভয়ভীতি দেখানো এসব কখনই বন্ধ হবে না। সরকারের অন্যয় কর্মকাণ্ড যে দেশের মানুষ চোখে বুঝে মেনে নেয় সেদেশের জন্য ভালো কিছু করা আত্মহত্যার সামিল। ষরযন্ত্র করে যারা ক্ষমতায় টিকে থাকে তাদেরকে ষড়যন্ত্র করেই উৎখাত করতে হবে। এর বিকল্প কিছু নাই। এই কুনীতিই এখন সুনীতি হয়েছে রাজনীতিবিদদের কাছে।
বাইরের দেশের স্বার্থ চিন্তা করে বিদ্যুৎ আমদানি, কয়লা আমদানি, এলপিজি আমদানি এসবের প্রতিবাদ দেশের জনগণ করে না। নিজের দেশের সম্পদ গোপনে লুট করে নিলে কারো বিচার হয়না। প্রতিবাদ হয় না। রাস্তায় বেঘোরে প্রাণ হারায় মানুষ, শাসকরা হাসে। এজন্য কারো শাস্তি হয় না। সেখানে ভালো কিছু চাওয়া পাপ।
লেখক: সাংবাদিক
তারিখ: ২৮-৮-২০১৮ সময় সকাল ৯ টা ৫০
No comments