Header Ads

Header ADS

ইভিএমে কারচুপি হবে না গ্যারান্টি কি?

একটি নমুনা ইভিএম যন্ত্র সূত্র গুগুল

আধুনিক প্রযুক্তি কাজকে সহজ করে। শুদ্ধ করে। সর্বক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ভালো। তথ্যপ্রযুক্তির যন্ত্র হিসেবে আমরা সকলেই কম্পিউটারকেই বুঝি। তবে অনেকেই আমরা জানি না হাতের কাছে যে ক্যালকুলেটর সেটিও একটি কম্পিউটার। সেটি দেখতে ক্ষুদ্র ও নাম ক্যালকুলেটর হওয়ার কারণে সাধারণ লোকজন তাকে কম্পিউটার বলতে নারাজ। তেমনি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন সংক্ষেপে যাকে বলা হয় ইভিএম, সেটিও একটি ছোট খাট কম্পিউটার।

 বর্তমান সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে। তবে শাসক দল বাদে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এতে সায় দিচ্ছে না। ইভিএম নিয়ে প্রতিবেশী ভারতে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা দেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএমের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ভারতে ইভিএম টেম্পারিংয়ের একাধিক অভিযোগ দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রমাণ করে দেখিয়েছি বিরোধীরা। যে কারণে কংগ্রেস ও সমমনা দলগুলো দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যালট পেপারে ভোট নেয়ার জোরাল দাবি জানিয়েছে। আগামী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইভিএমকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক হাঙ্গামা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে সেখানে।  

বাংলাদেশে ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়াটাই যেখানে অস্বচ্ছ ও কারচুপিতে ভরপুর। সেখানে ইভিএম কতটা সঠিক হিসেবে বিবেচিত হবে। তাছাড়া ইভিএম তো ভোট করার একটি ধাপ মাত্র। ভোট অনুষ্ঠান করতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। ওসব কাজে প্রভাব বিস্তার করলে নির্বাচনের ফল পাল্টে যেতে পারে। যেমন ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয়ভীতি দেখানো, প্রতিপক্ষ দলের এজেন্টদের বের করে দেয়া, ফল পালটিয়ে দেয়া। এসব ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ কি? আর বর্তমান কমিশন হচ্ছে একটা ঠুঁটো জগন্নাথ। এর মাধ্যমে নির্বাচন হয় না, হয় সিলেকশন। আর নির্বাচন মানেই শুধু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি না। এই দুই দলের বাইরেও আরো অনক দল আছে। তাদের কথাও নির্বাচন কমিশনকে ভাবতে হবে।   

কম্পিউটার চলে মানুষের নির্দেশে। এই নির্দেশদাতা ব্যক্তি যদি অসৎ হয় তবে রেজাল্টও আসবে অসৎ ব্যক্তির পক্ষে। কঠোর নিরাপত্তা মধ্যে থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার যেখানে সুরক্ষিত থাকে না, সেখানে ইভিএম ঠিক থাকবে কীভাবে? যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন উঠিয়েছে দেশটির বিরোধীরা। তারাও ডিজিটাল চুরির অভিযোগ এনেছে ট্রাম্প সরকারের বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাম জোটের মেয়র প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী একটি বেসরকারি প্রাইভেট চ্যানেলে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপার দেখিয়ে প্রতিপক্ষের হিংসার শিকার হোন। ওই ঘটনায় শাসক দলের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন তিনি।  সেদিন দেখা যায় ব্যালট পেপারের বান্ডিলে আগে থেকেই নৌকায় সিল মেরে রাখা হয়েছে। আজ সেখানে ইভিএম থাকলে দেখা যেত দুর্নীতিবাজ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা  নিজেরাই ইভিএমের সুইচ টিপে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কয়েক হাজার ভোট দিয়ে রেখেছেন। কারণ ইভিএমের নিয়ন্ত্রণ যাদের কাছে তারাই যে কারো পক্ষে ভোট দিতে সক্ষম। 

শেখ হাসিনা বরিশালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট চুরি করে নিজের আত্মীয় প্রার্থী মেয়রকে জিতিয়েছেন। জনগণ দেখতে পারলনা একটি ত্রিমুখী নির্বাচনী লড়াই। যেটা গণতন্ত্রের জন্য ও ভোটের রাজনীতির জন্য দরকার ছিল। 

২০১৪ সালের আগে কেউ জানতো না বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া যায়। জাতীয় সংসদের ১৫৩ জন এমপি বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়। আর দেশের নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন আগে ভাগেই তাদের জয় নিশ্চিত করে  ফলাফল ঘোষণা করে। অথচ নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নেয়া। তারপর ফল ঘোষণা। কারণ সংবিধানে আছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ যখন মানা হলো না তখন নির্বাচন কমিশনের কি করা উচিত তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দিক নির্দেশনা তারা চাইতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তারা নিজেরাই সরকারের কথামত ফল ঘোষণা করে। যা ছিল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন লঙ্ঘনের সামিল। 

শেখ হাসিনা এতদিন খালেদা জিয়াকে ভোট চোর বলতেন। অনেকটা অহংকার নিয়েই তিনি এসব বলতেন। অহংকার পতনের মূল। তাই সর্বশক্তিমান শেখ হাসিনাকে ভোট চোর বানিয়ে ছেড়েছে। এখন তিনি নিজেই ভোট চুরি করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জেতান। পাশাপাশি তিনিই বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদদের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হয়ে নতুন এক নজির সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশে। তারপরও তিনি একজন সফল শাসক এই কারণে যে আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়াই বহাল তবিয়তে দেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এতে সাহায্য করছে ভারতের মত একটি শক্তিশালী দেশ। আগামীতেও তিনি এই শক্তির ওপর ভর করে ৫ বছরের জন্য দেশ শাসন করে যাবেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশবাসী সেটাই মনে করে।   

লেখক সাংবাদিক 

তারিখ ৩০-৮-২০১৮            

No comments

Theme images by wingmar. Powered by Blogger.