Header Ads

Header ADS

যে কারণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে না



সুমন দত্ত

একটি দল যখন জানতে পারে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতায় সে কোনো মতেই জিততে পারবে না। অন্যদিকে আরেকটি দল যখন নিশ্চিত হয় জনমত তাদের দিকেই। স্বচ্ছ নির্বাচন হলে তারাই জিতবে। তখন সেই দল কোনো মতেই তাদের হার মানতে রাজি হয় না। শক্তির শেষটুকু দিয়ে সে লড়াই করবে। আর এজন্যই আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান শান্তি পূর্ণ হবে না। আর সেই আলামত এখন সবার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে।

 ব্যাপক দুর্নীতির কারণে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। দেশে বেকারত্ব রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। নিজেকে দিয়েই বিচার করা যায়। মূল্যস্ফীতি রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। প্রতিবেশী দেশের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকায় অবমূল্যায়ন না চাইলেও করতে হচ্ছে। কারণ তা না হলে ডলার পাচার হয়ে যাবে। 

এমন এক অবস্থায় দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনটি হওয়ার কথা ছিল আড়াই বছর আগে। কারণ সংবিধানের ধারা বজায় রাখতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ভোটার বিহীন দশম সংসদ নির্বাচন করেছিল। 

আন্তর্জাতিকভাবে অধিকাংশ দেশ সেই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি। শুধু ভারত দিয়েছিল আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এই এক তরফা সমর্থন যে কতটা ভয়ঙ্কর ছিল তা দেশের সব মানুষ টের পেয়েছে। প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির অধিকাংশ নেতা কর্মী এমনকি শাসক দলেরও অনেক নেতা কর্মী গুম খুনের স্বীকার হয়েছে।

 আগে শুধু জনগণ জানতো বিরোধী দলের লোকজনই গুম খুনের স্বীকার। আওয়ামী লীগ করে এমন নেতা কর্মীও নীরবে গুম খুনের স্বীকার হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনে জবাবদিহিতা না থাকায় এবং সীমাহীন দুর্নীতি ও অপরাধকান্ডে পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা জড়িয়ে যাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।  ঘটনা ধামাচাপা দিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি দলের লোকজনকে হত্যা করা হয়। এমন কয়েকটি মানবাধিকার হরণকারী রিপোর্ট  আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্দভের মাধ্যমে জেনেছি।

 আজও সেই পরিবারগুলো তাদের প্রিয় ব্যক্তিকে খুঁজে বেড়ায়। যাদের নির্দেশে এসব গুম খুন হয়েছে তারাই আজ বলছে ক্ষমতায় না ফিরলে পিঠের চামড়া আর থাকবে না। রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। অন্যদিকে যারা সৎ হয়ে কাজ করেছেন তাদের কোনো ভয় নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে তেমনটাই মনে হয়েছে। তিনি স্বাভাবিকভাবে বলেছেন, ভোট না দিলে কোনো সমস্যা নেই। যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু তার দলের অন্যরা, বিশেষ করে তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, কামরুল ইসলাম, আনিসুল ইসলামের মুখে শোনা যায় ভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া।

 ক্ষমতা হারালে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। লক্ষাধিক খুন হবেন। এমন সব মন্তব্যে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তাই দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেখ হাসিনা চাইলেও হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ নেতাদের রক্ষার প্রয়োজনে যেন তেন ভাবে একটি নির্বাচন করতে হবে। এটাই এখন মূল লক্ষ্য। 

আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে বিশেষ করে ভারতের মন জয় করতে বলা হয় আওয়ামী লীগ জঙ্গি বিরোধী। অথচ এই সরকারের আমলে হলি আর্টিজেনের মত জঙ্গি ঘটনা ঘটে।  যার দায়ভার নেয় ইসলামিক স্টেট। বাংলা ভাইয়ের উত্থান বিএনপি আমলে হয়েছে। এটা যেমন সত্য। তেমনি ইসলামিক স্টেটের উত্থান আওয়ামী লীগের আমলে হয়েছে। এটাও সত্য। জঙ্গিবাদের রেকর্ড বরং আওয়ামী লীগ আমল বিএনপিকে ছাড়িয়ে গেছে। 

ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় হেফাজত ইসলামির মত জঙ্গি সংগঠনের নেতা কর্মীরা। সেই হামলার ভিডিও থাকলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সেই সংগঠনটির বিরুদ্ধে। অথচ ভোটের আশায় সেই হেফাজতকে দেয়া হয় গণ সম্বর্ধনা। তাদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পান কওয়ামী জননী খেতাব। এই হেফাজত তথা আইএস মতাদর্শী জঙ্গি সংগঠন মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যার তালিকা তৈরি করেছিল। সেই তালিকা অনুসারে অভিজিৎ, নিলাদ্রী, দীপনসহ বেশ কয়েকজনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যা করা হয়। আর এর দায়ভার চাপানো হয় জামাতি জঙ্গিদের ওপর। যারা সারা বছর পুলিশের ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে থাকে। অথচ জনগণের সন্দেহ এই হেফাজত জঙ্গিদের দিয়ে এসব করিয়েছে বিশেষ মহল। 

হেফাজত জঙ্গিদের কথায় সুপ্রিমকোর্টের থেমিসের মূর্তি বিতর্ক উসকে দেয় আওয়ামী লীগ। দোষ চাপায় হিন্দু বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ঘাড়ে। এরপর এক সংশোধনীকে কেন্দ্র করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ভয় ডর দেখিয়ে প্রধান বিচারপতিকে পদ থেকে অপসারণ করেন শেখ হাসিনা। এ কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চক্রান্তের আশ্রয় নেন। যা পরবর্তীতে সিনহার বইতে ফাঁস হয়। আর সেই সব ঘটনার দায় চাপানো হয় ড. কামাল হোসেনের ঘাড়ে। এভাবে প্রতিটি আকাম আর কুকামের দায় ভার অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে শেখ হাসিনা দায়মুক্ত হয়ে দিব্যি বহাল তবিয়তে আছেন।

১০ বছর শাসন করে তিনি খোঁজ নেন না বন্ধ হয়ে যাওয়া ডেসটিনির লোকজনদের, যারা সম্পদ ও চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খোঁজ নেন না যুবক ও ইউনিটুপের বিনিয়োগকারীদের। উল্টো দেখা যায় শেয়ার বাজারে কেলেঙ্কারি করা অভিযুক্তদের নৌকা প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছেন। 

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন এক লাফে কয়েকগুণ বাড়ানো হলেও বেসরকারি চাকুরীজীবীদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাদের জীবন মানের কথা ভাবা হয়নি। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় সার্ভিস সেক্টর বেসরকারি খাত। এই সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীজীবীদের মধ্যে বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। 

মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স সীমা কমিয়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন। রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। এমনকি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দিয়েছে। সেই সব ব্যক্তিদের নাম জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে।

 সরকার ডিজিটাল আইন করে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করেছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান গণমাধ্যমকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। এভাবে সরকার নানা ক্ষেত্রে কালা কানুন করে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার সংকুচিত করেছে। যা এই দলটির কাছ থেকে কেউ আশা করেনি। 

আজ ভোটের আগে ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপানোর গল্প শোনানো হয়। কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বানানো টেপ প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে যোষিত সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহীমের বৈঠকের খবর প্রকাশ করা হয়। অথচ নিজ দলের লোকরা মাস ভরে পাকিস্তান গিয়ে আরাম আয়েশ করে আসে। সে খবর চেপে রাখা হয়। ক্লাসিক গল্প রচনা করতে শাসক আওয়ামী লীগের চাইতে আর কেউ ভালো না। চক্রান্তে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছে এই সরকার। শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না, তেমনি এই সরকারের প্রতিটি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ফাঁস হবে। সেদিন বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের কোনো কথায় বিশ্বাস রাখবে না। তখন সত্যিকারের অর্জনও মিথ্যায় পরিণত হবে। সেই পথই তৈরি করলেন শেখ হাসিনা ও তার বুদ্ধিজীবীরা।

রাজাকার জামাতিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শেখ হাসিনা যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন দুর্নীতি ব্যাংক লুট, মাদক সন্ত্রাস ও গুমখুন করে তা ম্লান করে দিয়েছেন তিনি। তাই জনগণ তাকে ভোট দেবে না। আজ যদি গুমখুনের ও ব্যাংক লুটেরাদের বিচার করা হতো। তাহলে আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমেই জিতে আসত। শেখ হাসিনা রিজার্ভ চোরদের, ব্যাংক লুটপাট কারীদের ও ইয়াবা বদিদের পক্ষ নেয়ার কারণেই পরাজিত হবেন। সেটাই তিনি জেনেছেন বিভিন্ন সূত্র থেকে। এ কারণে তাকে আজ নির্বাচনের জিততে আশ্রয় নিতে হচ্ছে আইএসআই, দাউদ, জঙ্গি এসব গল্পের। 

পরিশেষে বলতে চাই বঙ্গবন্ধু এক ভাষণের কথা। যেখানে তিনি বলেছেন, আমি যোগাড় করি, আর চাটার দল তা খেয়ে শেষ করে ফেলে। তেমনি শেখ হাসিনাকে ঘিরে থাকা চাটারদল এতটাই শক্তিশালী যে তিনি তাদের বুহ্যে ভেদ করে বাইরে আসতে পারবেন না। নানা গল্প বলে তাকে সেই বুহ্যে আটকে রাখবে। প্রকৃত চিত্র তার কাছে তুলে ধরা হবে না। এই চাটার দলের কারণেই শেখ হাসিনার সরকারের পতন হবে। যেভাবে বিএনপির হয়েছিল এক সময়।               

No comments

Theme images by wingmar. Powered by Blogger.