বিজেপির ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হলো
সুমন দত্ত
ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি জোট সরকার। উত্তর প্রদেশের রজানীতিতে দুটি বৃহৎ দল সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির মধ্যে জোট করার ঘোষণায় এই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে বিজেপি শিবিরে।
ভারতে সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ। লোকসভায় এই রাজ্যে আসন ৮০টি। ২০১৪ সালে বিজেপি এই রাজ্য থেকে ৭১ আসনে জয় পেয়েছিল। এবার এমনটি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এক কালের চির শত্রু সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির মধ্যে মিত্রতা তৈরি হয়েছে। এতদিন উত্তর প্রদেশের ভোট তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি ও কংগ্রেসের মধ্যে ভাগ হতো। এর এ থেকে ফায়দা তুলত বিজেপি। এবার তা হচ্ছে না। সবগুলো বিরোধী দল এখন এক হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট করেছে। জোট বদ্ধ হয়ে একক প্রার্থী দেবে তারা। এতেই বিজেপির চক্ষু চড়কগাছ। ইভিএম টেম্পারিং কিংবা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছাড়া জেতার কোনো চান্স নেই। গেল লোকসভা নির্বাচনে মুজাফফর নগর দাঙ্গাকে নির্বাচনের প্রচারে ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছিল। অমিত শাহকে রাজার আসনে বসিয়েছিল বিজেপি। এবার অমিত শাহ উত্তর প্রদেশে কি ম্যাজিক দেখাবেন সেটা ভাবতে হচ্ছে বিজেপিকে। কিছুদিন আগে তিন রাজ্যে বিজেপির হার ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত।
এদিকে ক্ষমতায় গিয়ে বিজেপি জোট শরীকদের তেমন কোনো পাত্তা দেয়নি। এতে মহারাষ্ট্রের মত রাজ্যে বিজেপির প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে শিব সেনার। তারপরও শিব সেনা বিজেপির সঙ্গে আছে বলে ঘোষণা দেয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন নরেন্দ্র মোদী।
এবারের লোক সভা নির্বাচনে বিজেপি কোনো ইস্যুতে জয় লাভ করবে সেটা বোঝা কঠিন। কারণ বিজেপি যেসব উদ্যোগ জনগণের জন্য নিয়েছে সেগুলো সব একে একে ব্যর্থ হয়েছে। নোটবন্দীর সফলতা বিজেপি নিজ ঘরে তুলতে পারেনি। জিএসটি চালু করে বিজেপি ভারতের ফেডারেল কাঠামোর সরকারের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ওপর আঘাত করেছে। ভারত রাষ্ট্রের রাজ্য গুলো নিজেদের পণ্য বেচা কেনায় অর্থনৈতিক যেসব সুবিধা পেত সেগুলো জিএসটির নামে কেড়ে নিচ্ছে। যদিও লোকজনকে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে এতে রাজ্যগুলো কেন্দ্র সরকার থেকে আরো বেশি অর্থ সহায়তা পাবে।
ভারতে মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে পড়ে যাচ্ছে। এতে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া নানা রকম কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাচ্ছে বিজেপি। বিজয় মালিয়া, মেহুল চেকসির মত লুটপাটকারীরা বিজেপির প্রশাসনের সহায়তায় দেশ থেকে পালিয়েছে। সুইস ব্যাঙ্ক থেকে ভারতীয়দের কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। যা বিজেপির ইশতেহারে গতবার ছিল।
তবে বিজেপির জন্য একটি সুখবর বিরোধী শিবিরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কোনো যোগ্য প্রার্থী নেই। তবে জোট রাজনীতিতে এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। ভারতে এমন অনেক প্রধানমন্ত্রী এসেছেন যারা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন ঘোষণা ছিল না। কয়েকটা রাজনৈতিক বৈঠকের পরই দলগুলো প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঠিক করে ফেলে। এবার হয়ত তেমনই কিছু দেখা যাবে।
No comments